জেতা লোকসভা আসনে তৃণমূলের প্রার্থী কারা?
পঞ্চায়েত ভোটের দামামা বেজে গিয়েছে। মনোনয়ন পর্ব শেষ। এবার শুধু অপেক্ষা নির্বাচনের। বছর ঘুরলেই লোকসভার মহারণ যার প্রস্তুতি এখন থেকেই নিচ্ছে তৃণমূল থেকে বিজেপি থেকে বাম এবং কংগ্রেস। কিন্তু বর্তমান যারা সাংসদ রয়েছেন, তাদেরই কি টিকিট দেবে তাদের দল? বাকি তুলে আনবে নতুন মুখ? মাটির হকিকতের ওপর দাঁড়িয়ে এই বিচার করছে নিউজনাও। উল্লেখ্য, বর্তমানে যে কেন্দ্রে যে দলের সাংসদ রয়েছে, তার হিসেবেই হবে বিচার।
১) গতবার পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুকে জয়লাভ করে তৃণমূল, সাংসদ হন বর্তমান বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর দাদা দিব্যেন্দু অধিকারী। কিন্তু মেজভাই এখন গেরুয়া শিবিরের প্রথম সারির নেতা হয়ে যাওয়ায় তিনিও নাম লিখিয়েছেন সেই দলে। তাই, জোড়াফুলের প্রার্থী এবার হচ্ছেননা বড় অধিকারী। তাঁর জায়গায় শোনা যাচ্ছে যে রাজ্যের মন্ত্রী অখিল গিরিকে বা কোনো তারকা প্রার্থী দাঁড় করাতে পারে তৃণমূল। বিজেপি থেকে অবশ্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার প্রবল চান্স দিব্যেন্দুর।
২) ঘাটালে গতবার নিয়ে দুবার জিতেছেন বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির সবচেয়ে জনপ্রিয় অভিনেতা দীপক অধিকারী, বা দেব। জোড়াফুল শিবির যে এবারও তার ওপরেই ভরসা রাখবে, তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। বিজেপিও পাল্টা কোনো তারকা মুখকেই এই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করানোর জন্য খুঁজছে বলে সূত্রের খবর।
৩) আগামী নির্বাচনে বাংলার সবচেয়ে হাই-ভোল্টেজ আসন হয়তো হবে কাঁথি, যেখানকার বর্তমান সাংসদ শিশির অধিকারী তৃণমূলের টিকিটে জিতলেও ছেলে শুভেন্দুর সঙ্গে চলে গেছেন বিজেপিতে। তৃণমূল তাকে টিকিট দেবেনা, এবং শুভেন্দু হয়তো নিজে দাঁড়াতে পারেন বিজেপির হয়ে। উল্টোদিকে কোনো শীর্ষস্থানীয় নেতাকে বা তারকাকে দাঁড় করিয়ে চমক দিতে পারে তৃণমূল, আসছে খবর।
৪) উলুবেড়িয়ার দোর্দন্ডপ্রতাপ সাংসদ ছিলেন সুলতান আহেমদ, যার মৃত্যুর পর সেখানে জোড়াফুলের টিকিটে দাঁড়িয়ে যেতেন তাঁর স্ত্রী সাজদা আহেমদ, যিনি পরেরবারও হতে পারেন তৃণমূল প্রার্থী।
৫) উত্তর কলকাতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত থেকে সরানোর কোনো অভিপ্রায়ই নেই তৃণমূলের। বিজেপি আবার লড়তে পারেন রাহুল সিনহা, বা দাঁড় করানো হতে পারে তাদের গতবারের কৃষ্ণনগরের এবং মানিকতলা বিধানসভার প্রার্থী কল্যাণ চৌবেকে, জানাচ্ছে বিজেপি সূত্র।
৬) একই ব্যাপার হাওড়া লোকসভা কেন্দ্রে, যেখানে প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়কেই প্রার্থী করতে চলেছে তৃণমূল।
৭) ডায়মন্ড হারবার থেকেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার প্রবণতা রয়েছে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তাঁর বিরুদ্ধে যুৎসই মুখ খুঁজতেই হিমশিম খাচ্ছে বিজেপি।
৮) শ্রীরামপুরে আবারো থাকছেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথমদিনের সৈনিক আইনজীবী কল্যাণকে সংসদে চায় তৃণমূল, নিজেদের বক্তব্য জোরালোভাবে দেশের সামনে তুলে ধরার জন্য।
৯) যাদবপুর থেকে না প্রতিদ্বন্দ্বিতা করিয়ে অন্য জায়গায় পাঠানো হতে পারে বর্তমান সাংসদ ও অভিনেত্রী মিমি চক্রবর্তীকে। তাঁর জায়গায় নাম শোনা যাচ্ছে প্রাক্তণ সাংসদ ও নেতাজির পরিবারের সদস্য অধ্যাপক সুগত বসুর, যিনি গত কয়েকবছর সক্রিয় রাজনীতিতে না থাকলেও ফিরেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় মুখপাত্রদের তালিকায়।
১০) বারাসাত থেকেই জোড়াফুল প্রতীকে লড়াই করবেন ডঃ কাকলী ঘোষ দস্তিদার। বারাসতকে বরাবরই চিকিৎসক সাংসদ উপহার দিয়েছে তৃণমূল, এবারও তার অন্যথা হবেনা।
১১) বসিরহাটের সাংসদ-অভিনেত্রী নুসরত জাহানকেও অন্য কেন্দ্রে পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে তৃণমূলের। স্থানীয় মুখ খুঁজছে তারা।
১২) মুর্শিদাবাদ কেন্দ্র থেকে আরেকবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সম্ভাবনা ক্ষীণ তৃণমূল সাংসদ আবু তাহের খানের। কারণ, অসুস্থতা।
১৩) একই কারণ এবং বয়সের কারণে মথুরাপুরের তৃণমূল সাংসদ চৌধুরী মোহন জাটুয়াকেও অব্যাহতি দেবে তৃণমূল।
১৪) আপাতত কেষ্ট-বিহীন বোলপুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা প্রবল বর্তমান তৃণমূল সাংসদ অসিত মালের। বিশ্বভারতী নিয়ে বিজেপির অবস্থা এখন এত খারাপ যে বোলপুর থেকে কাকে প্রার্থী করবে তারা, বুঝে উঠতে পারছেনা।
১৫) কৃষ্ণনগর থেকেই জোড়াফুল প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন তৃণমূলের স্টার সাংসদ মহুয়া মৈত্র। প্রাক্তণ টপ কর্পোরেট মহুয়ার বিরুদ্ধে অনেক বুঝেশুনে প্রার্থী দাঁড় করাতে চাইছে বিজেপি, কারণ গতবার তারা কৃষ্ণনগরকে জয়ের খাতায় লিখে নিলেও খেলা ঘুরিয়ে দেন মহুয়া, কার পরে বীতশ্রদ্ধ দিলীপ ঘোষকে বলতে শোনা যায়, “কৃষ্ণনগরের হিন্দুরা মরুক, আমার যায়-আসেনা।”
১৬) বিধানসভা নির্বাচনের আগে দল বদলে বিজেপিতে চলে যান পূর্ব বর্ধমানের তৃণমূল সাংসদ সুনীল কুমার মন্ডল। পরে অবশ্য ঘনিষ্টতা বাড়িয়ে ফিরে আসেন নিজের পুরনো দলে, এমন হাবভাব যেন কিছু হয়ইনি। এবার তাকে টিকিট দিতে নারাজ টিএমসি।
১৭) জয়নগর থেকে এবারও তৃণমূলের প্রার্থী হবেন শিক্ষিকা প্রতিমা মন্ডল। প্রতিমাদেবীর বাবা গোবিন্দ নস্করকে দক্ষিণ ২৪ পরগনার রাজনীতির মহীরুহ বলা হয়।
১৮) আরামবাগেই থাকবেন অপরূপা পোদ্দার। আগেরবার একেবারে কানের পাশ দিয়ে জয় পেলেও এবারও তাঁর ওপরেই ভরসা রাখতে চলেছে তৃণমূল শিবির।
১৯) জঙ্গীপুরে আর তৃণমূলের প্রার্থী হবেননা খলিলুর রহমান, জানা যাচ্ছে তৃণমূলের অন্দরে কান পাতলেই। দেশের এক প্রাক্তণ রাষ্ট্রপতির পুত্রকে জোড়াফুলের প্রতীকে লড়ার সুযোগ করে দিতে পারেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, আসছে খবর।
২০) দমদমে সৌগত রায় ছাড়া অন্য কাউকে প্রার্থী করার কথা ভাবছেই না তৃণমূল কংগ্রেস। লোকসভার অন্যতম ভোকাল সাংসদ সৌগত যে এবারও দাড়িয়ে বড় মার্জিনে জয়লাভ করবেন, তা নিয়ে আত্মবিশ্বাসী দল।
২১) দক্ষিণ কলকাতায় আবারো মালা রায়কে টিকিট দেবে তৃণমূল। তাদের অন্যতম শক্ত ঘাঁটি, যেখান থেকে ২০০৪ সালে রাজ্যজুড়ে তৃণমূলের একমাত্র সাংসদ ছিলেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তার দায়িত্ব আবারো বর্তাবে কলকাতা পুরসভার একদা প্রাজ্ঞ প্রতিনিধি মালার ওপর।
২২) বীরভূম কেন্দ্র থেকে আবারো তৃণমূলের টিকিট পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে শতাব্দী রায়ের। কেষ্ট-বিহীন বীরভূমে প্রাক্তণ অভিনেত্রীর ওপরেই ভরসা রাখতে চাইছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
২৩) আসানসোলে কি আবার তৃণমূলের হয়ে দাঁড়াবেন বলিউড তারকা শত্রুঘ্ন সিনহা? উঠছে প্রশ্ন। বাবুল সুপ্রিয় তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর উপনির্বাচনে তৃণমূলের হয়ে জয়লাভ করেন “বিহারী বাবু”। কিন্তু এবার তাঁকে অব্যাহতি দিতে পারেন দলনেত্রী, জানা যাচ্ছে তৃণমূলের অন্দর থেকে।