চার্চ কি দয়া করে কিছু বলবে? : প্রশ্ন ডেরেক ও’ব্রায়েনের
জানুয়ারি 3, 2025 3 min read
চার্চের নেতৃত্বকে জনগণের কথা শুনতে হবে এবং তাদের উদ্বেগ এবং নিরাপত্তাহীনতার বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে
” ভালো মানুষরা যদি কিছুই না করে তবে মন্দের জয় হবেই।” — আলেক্সি নাভালনি, রাশিয়ার বিরোধী নেতা
আমার দুই দশকের রাজনৈতিক কর্মজীবনে ও পার্লামেন্টের তিনটি মেয়াদে আমি বিভিন্ন বিষয়ে কলাম লিখেছি, কিন্তু ভারতের গির্জা এবং ক্রিস্টান সম্প্রদায় নিয়ে কিছু লিখিনি। প্রথমবার আমি এই নিয়ে লিখছি এবং এটা লেখার দরকার ছিল। এই বিষয়ে নীরবতা আমাকে মানায় না।
একটি বৃহৎ ধর্মীয় সংঘঠনের একজন প্রাক্তন নেতা (একটি অঞ্চলের প্রধান) আমাকে একবার বলেছিলেন: “বিশপদের অবশ্যই সমস্ত আধ্যাত্মিক বিষয়ে চার্চকে নেতৃত্ব দিতে হবে। কিন্তু এখন কি সাধারণ ক্যাথলিক নেতাদের একত্রিত হওয়ার এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে গির্জার পক্ষ থেকে দিক নির্দেশনা করার সময় এসেছে? এই নিয়ে বিতর্কের সময় এসেছে। এখন সময় এসেছে যাতে খ্রিস্টানরা (চার্চ দ্বারা যাদের সাধারণ হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে) খোলাখুলিভাবে ভারতের ক্যাথলিক চার্চের মূল সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী সংস্থার অন্তর্ভুক্ত কয়েকশো বিশপদের সরাসরি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করার।
খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের পুরোহিত এবং সন্ন্যাসীনীরা, যারা সাধারণত শৃঙ্খলার কঠোর নিয়মে আবদ্ধ, তারাও আজ কথা বলতে শুরু করেছে। একজন সন্ন্যাসী, যিনি একজন শীর্ষ স্থানীয় শিক্ষাবিদ, আমাকে বলেছেন: “বিশপ বড়দিনের সময় প্রধানমন্ত্রীকে ফটো-অপারেশনের জন্য যে একটি প্ল্যাটফর্ম দিয়েছে তা গ্রহণযোগ্য নয়। আমি মিডিয়ায় শুধু প্রধানমন্ত্রীর ভিডিও দেখেছি। নিছক নোংরামি, আসল ইস্যুতে কোনো কথাই হয়নি”। তিনি যোগ করেছেন: “তারা যাকে ইচ্ছা আমন্ত্রণ জানাতে পারে, তবে কেন ২০ জন নির্বাচিত খ্রিস্টান এমপিদের মধ্যে একজনকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়নি?মোদী মহাশয় কি এই অনুষ্ঠানের জন্য একটা শর্ত রেখেছিলেন?”
সব উৎসবকে সর্বদা স্বাগত জানাই. কিন্তু এখন, এই কঠিন প্রশ্নগুলি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে জিজ্ঞাসা করা উচিত। অনেক বড়দিন চলে গেছে, এবার উত্তর চাওয়ার পালা।
(১) কেন আপনি ক্রিসমাস ডে-কে “গুড গভর্নেন্স ডে” এ পরিণত করার চেষ্টা করেছিলেন?;
(২) কেন আপনি ফরেন কান্ট্রিবিউশন রেগুলেশন আইন (FCRA) শুধুমাত্র খ্রিস্টান সম্প্রদায় দ্বারা পরিচালিত প্রতিষ্ঠানগুলিকে লক্ষ্য করার জন্য অস্ত্র তৈরি করছেন?;
(৩) কেন আপনি মণিপুরের মানুষ-দের সম্পূর্ণ উপেক্ষা করেছেন?
(৪) কেন আপনি সংবিধানের ১৪, ১৫ এবং ২৫ অনুচ্ছেদের অধীনে মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করে এমন ধর্মান্তর বিরোধী আইনগুলিকে উৎসাহ দিচ্ছেন এবং অরুণাচলপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, গুজরাট, হরিয়ানা, হিমাচল প্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ, ওড়িশা, উত্তরাখণ্ড, রাজস্থান- এই সব রাজ্যে এই আইনগুলো পাস করছেন?
(৫) কেন আপনি ওয়াকফ বিলকে লাগু করতে চাইছেন এবং সংখ্যালঘু বনাম সংখ্যালঘুর খেলায় মেতে আছেন, বিশেষ করে কেরালায়?
(৬) কেন আপনি ঘৃণাত্মক ভাষণ এবং ঘৃণিত সাম্প্রদায়িক অপবাদের নিন্দা করে একটি কথাও বলেন না?
(৭) কেন সংখ্যালঘুদের দ্বারা পরিচালিত প্রতিষ্ঠানের উপর হামলা বাড়ছে?
(৮) কেন খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে হিংসার ঘটনা বাড়ছে?
(৯) কেন ভারতের জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ২০১৪ সালের পর থেকে দু’বার জাতিসংঘের স্বীকৃতি হারালো?
(১০) ফাদার স্ট্যান স্বামীর কথা মনে আছে? সিপার? স্ট্র? ডেথ?
গত বছর, ২০ জন খ্রিস্টান সাংসদ-দের ৩ ডিসেম্বর বিশপদের পক্ষ থেকে নৈশভোজে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। আরও সঠিকভাবে বলতে গেলে, এরা ‘খ্রিস্টান’ সাংসদ ছিলেন না বরং নির্বাচিত সাংসদ ছিলেন যারা খ্রিস্টান ধর্মসম্প্রদায়ের। অনেক সাংসদ জোর দিয়েছিলেন যে বৈঠকটি লোক দেখানো কাজের মধ্যে থাকলে চলবে না বরং তার বাইরেও একটা বার্তা রাখতে হবে। একটা এজেন্ডা থাকা দরকার ছিল। বিশপদের সংস্থা তখন লিখিতভাবে সংসদ সদস্যদের কাছে নয় দফা এজেন্ডা নিয়ে আসে। ৯০-মিনিটের বৈঠকে যা আলোচনা করা হয়েছিল সেই খবর যখন মিডিয়াতে ছড়িয়ে পড়ে, তখন এই বিশপদের সংস্থা ড্যামেজ কন্ট্রোল মোডে চলে যায় এবং কোনও বৈঠক হওয়ার কথা অস্বীকার করে একটি বিবৃতি জারি করে। অতি চালকের গলায় দড়ি !
সত্যি কথা বলতে, বৈঠক হয়েছে। এবং পাশাপাশি এই এজেন্ডা সম্পর্কে সকলকে অবহিত করা হয়েছে।
সাংসদ-দের দ্বারা উত্থাপিত কিছু পয়েন্ট অন্তর্ভুক্ত:
(১) ফটো-অপস বন্ধ করা দরকার। যারা সংবিধান রক্ষা করছে না তাদের ডাকার জন্য খ্রিস্টান নেতৃত্বের অবস্থান নেওয়া উচিত;
(২) মুসলিম সম্প্রদায়কে সমর্থন করুন, নীতিগতভাবে, ওয়াকফ বিলে, স্বীকার করুন যে বিলটিতে এমন কিছু ধারা থাকতে পারে যা একটি বা দুটি রাজ্যে বিতর্কিত;
(৩) খ্রিস্টান সংস্থাগুলিকে নিশানা করা হচ্ছে এবং ফরেন কন্ট্রিবিউশন রেগুলেশন আইন (FCRA)লাইসেন্স বাতিল করা হচ্ছে;
(৪) সংরক্ষণের সমস্যা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হস্তক্ষেপ এবং উপাসনালয় এবং কর্মীদের উপর বারবার আক্রমণ।
আমি সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলাম এবং একটি পরামর্শ দিয়েছিলাম, তা হল নেতিবাচক ঘটনা এবং সংবাদের প্রতি প্রতিক্রিয়াশীল না হয়ে সক্রিয় হওয়া এবং একটি ইতিবাচক বর্ণনায় ফোকাস করা। যা ফোকাস হতে পারে তা হল শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং সামাজিক কল্যাণে ক্রিস্টান সম্প্রদায়ের উল্লেখযোগ্য অবদান।
অনেক তথ্যের মধ্যে এখানে দুটির উল্লেখ:
(১) ভারতে ১০ টি ধর্মীয় সংখ্যালঘু বিদ্যালয়ের মধ্যে সাতটি খ্রিস্টান সম্প্রদায় দ্বারা পরিচালিত হয়।
(২) খ্রিস্টানদের দ্বারা পরিচালিত প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত প্রতি চারজন ছাত্রের মধ্যে তিনজনই অ-খ্রিস্টান।
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন জেসুইট মানবাধিকার এবং শান্তি কর্মী এবং লেখক ফাদার সেড্রিক প্রকাশ, আমার সাথে কথা বলতে গিয়ে খোলাখুলি বললেন : “ভারতের ক্রিস্টান নেতৃত্ব মনে হয় সুযোগ হাতছাড়া করেছেন, তাদের হৃদয় ও কান দেশের লক্ষ লক্ষ দুঃখী মানুষের আর্তনাদ শোনে না – বিশেষ করে সংখ্যালঘুদের। এমনকি যদি তারা এই বাস্তবতা সম্পর্কে অবগত থাকলেও , তারা দৃশ্যমান এবং সোচ্চার অবস্থান নিতে কেন্দ্রীয় শাসনকে সম্পূর্ণরূপে ভয় পায় – কেবলমাত্র যদি তারা, যা প্রকাশ্যে আসছে না তা স্বীকৃতি দেয়, আজকের ভারতে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের জন্য এই সমস্ত কিছু ভাল নয়।”