ডাক্তারদের সুপ্রিম কোর্টকে অবমাননা নৈরাজ্যের লক্ষণ
আরজি কর কাণ্ডে বিগত একমাস ধরে গোটা রাজ্যজুড়ে প্রতিবাদ চলছে। চিকিৎসক থেকে শুরু করে সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব সহ সমস্ত স্তরের মানুষজন প্রতিবাদ করছেন। রাজনৈতিক , অরাজনৈতিকভাবে প্রতিবাদ কর্মসূচি চলছে। জুনিয়র চিকিৎসকরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। এমন অবস্থায় সুপ্রিম কোর্ট জুনিয়র চিকিৎসকদের কাজে ফেরার কথা বলেছিল। কাজে যোগ দেননি রাজ্যের আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তাররা। আর তাতেই রীতিমতো বিস্মিত জাতীয় মহল।সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশকে এভাবে তোয়াক্কা না করার ঘটনা একপ্রকার নজিরবিহীন।
কেন্দ্র বা রাজ্য সরকারও সর্বোচ্চ আদালতের আদেশ অগ্রাহ্য করে না। বাংলার জুনিয়র ডাক্তাররা এই নতুন প্রবণতার জন্ম দেওয়ায় আইন মন্ত্রক অথবা রাজনৈতিক মহল, সকলেই বিস্মিত। আইনমন্ত্রক সূত্রে জানা যাচ্ছে, এর অর্থ হল সরাসরি আদালতের অবমাননা। ১৯৭১ সালের কনটেম্পট অব কোর্টস অ্যাক্ট অনুযায়ী, আদালত অবমনানর সাজা সর্বোচ্চ ৬ মাসের কারাদণ্ড, জরিমানা, অথবা সাজা ও জরিমানা দুটোই। আদালত এই জেল-জরিমানা মকুব করে দিতে পারে, যদি আদালত অবমাননাকারী আদালতে এসে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন। সেক্ষেত্রেও আইনে বলা রয়েছে, সুপ্রিম কোর্ট স্থির করবে, সেই ক্ষমাপ্রার্থনা যথেষ্ট কি না। অনেকেই বলছেন জুনিয়র ডাক্তাররা যেভাবে কর্মবিরতি পালন করে চলেছেন, তা নৈরাজ্যের লক্ষণ নয় কি?
আরজি করের ঘটনায় দ্রুত বিচার তথা সুবিচারের দাবি এক জিনিস, কিন্তু যাঁরা জুনিয়র ডাক্তারদের লাগাতার কর্মবিরতিকে সমর্থন করছেন, তাঁরাও কি নৈরাজ্যকেই প্রশ্রয় দিচ্ছেন না? প্রিম কোর্টের নির্দেশে স্পষ্ট বলা হয়েছে, জুনিয়র ডাক্তাররা যদি ১০ সেপ্টেম্বর বিকেল ৫টার মধ্যে কাজে ফেরেন, তাহলে তাঁদের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণে কোনও ব্যবস্থা নিতে পারবে না পশ্চিমবঙ্গ সরকার। তাঁদের নিরাপত্তা নিয়ে এর পর যদি কোনও অভিযোগ ওঠে তাহলে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কোনও অফিসারকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।
কিন্তু এই সব ব্যবস্থা নেওয়ার পরও যদি জুনিয়র ডাক্তাররা লাগাতার অনুপস্থিত থাকেন তাহলে ভবিষ্যতে বিরূপ ব্যবস্থা নেওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। কারণ, “যাঁদের পরিষেবা দেওয়া রেসিডেন্ট ডাক্তারদের কাজ, তা থেকে তাঁরা বিস্মৃত হয়ে থাকতে পারেন না, তাই উপরে উদ্ধৃত সময়ের মধ্যে তাঁদের কাজে ফেরা উচিত।”তবে জুনিয়র ডাক্তাররা বলছেন, সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছে সরকারি হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজগুলিতে নিরাপত্তা ও সুরক্ষার পরিস্থিতি সুনিশ্চিত করতে হবে সরকারকে। তা এখনও সরকার করতে পারেনি। তাই জুনিয়র ডাক্তাররাও কাজে যোগ দিচ্ছেন না। আগামী শুনানিতে সুপ্রিম কোর্ট কড়াভাবে জবাবদিহি চাইতে পারে বলেই মনে করা হচ্ছে।