অশৌচ পালনের বাস্তবতা
‘জাস্টিস ফর আর জি কর’ আন্দোলনের নামে আসন্ন দুর্গাপুজোয় অশৌচ পালনের ডাক দেওয়া হয় সামাজিক মাধ্যমে। মিছিলে অংশগ্রহণকারী তারকাদের একাংশ দুর্গাপুজো না করার ডাক দেন। চাঁদা চাইলে অশৌচ পালনের নিদানও দেন। এই ডাকের ফলে আর কিছু না হোক, পুজোর কয়েক সপ্তাহ আগেও কোনো DSLRধারীর সামনে কাশবন থেকে বেরিয়ে আসেনি কোনো ফ্রিল্যান্স মডেল। হাফ ছেড়ে বেঁচেছেন বছরের পর বছর Cringe Content দেখতে দেখতে বিরক্ত বহু নেটিজেন।
অন্যদিকে টলিউডের একাংশ যারা ছুটির দিন হলেই রাস্তায় নেমে পড়ছেন অবশ্যই নিজেদের শ্যুটিং সেরে, কাজ নিয়ে তো কম্প্রোমাইজ করা যায় না, তবে তারা অন্যদের অন্নসংস্থানের উৎসবে ফিরতে রাজি নন। মেয়েদের রাত দখলের অন্যতম মুখ টলিউডের সোহিনী সরকার, বিদীপ্তা চক্রবর্তী, সুদীপ্তা চক্রবর্তী, স্বস্তিকা মুখার্জী সহ আরও অনেকে। তবে আন্দোলনের মাঝে তাদের কাজ বা সমাজমাধমে করা পোস্ট খানিকটা যেন তাল কেটে দিল।
সম্প্রতি পুজো কালেকশনের এক বিজ্ঞাপনে মুখ দেখান অভিনেত্রী সোহিনী সরকার। আর জি কর কাণ্ডের প্রতিবাদ জানাতে বারে বারে পথে দেখা গিয়েছে তাকে। আর এতেই বেজায় চোটে গেলেন নেটিজেনরা। অশৌচ পালন যখন হবেই, তাহলে পুজো কালেকশনের বিজ্ঞাপন দেখানোর প্রয়োজন কেন? খ্যাতনামা শাড়ি সংস্থার বিজ্ঞাপনী ভিডিও প্রকাশ্যে আসাতেই নিন্দুকেরা সমালোচনা শুরু করেন। কমেন্ট সেকশনে তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, পুজো উদযাপন কোরো না এবছর, অশৌচ পালন হোক, শপিং বন্ধ থাকুক, এদেশ মা হতে না চাওয়ার ক্ষোভ, এসমস্ত যাবতীয় দাবি তোলার পর এখন কী হল ম্যাডাম? অশৌচ পালন ছেড়ে পুজো কালেকশনের প্রচার করছেন কেন?
এর মাঝে স্বস্তিকা মুখার্জী ফেসবুকে পোস্ট করেন টেক্কা সিনেমার প্রমোশনাল ভিডিও। ক্যাপশনে লেখেন, “সাহেব বিবি গোলামের দেশে, আস্তিনে থাক… .এবার পুজোয় দেখা হচ্ছে #Tekka-র সাথে!” আর যায় কোথায়? নেটিজেনরা ছেঁকে ধরেন। কেউ বলেন, “পুজোয় অশৌচ, আপনার সিনেমা দেখতে পারব না।” আবার কারুর বক্তব্য, “অশৌচ অবস্থায় সিনেমা দেখবো না। আপনি বরং বিচার পাওয়ার পরে সিনেমা রিলিজ করুন।” অনেকে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেন, “স্টারডমের সায়াহ্নে এসে সিনেমা হিট করছে না, দাঁদ-হাজা-চুলকানির বিজ্ঞাপনও মিলছে না, তাই কি আন্দোলনে এসে রেলিভেন্স বজায় রাখার চেষ্টা করছেন সোহিনী-স্বস্তিকা-শ্রীলেখারা।”
বেশ কয়েকদিন আগেই ক্লাবগুলোকে পুজোর অনুদান দেওয়া হবে বলে নবান্ন থেকে ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়। কিন্তু এই ঘটনার জেরে সরকারের দেওয়া অনুদান নেবে না বলে জানিয়েছে বেশ কয়েকটা ক্লাব। অনুদান গ্রহণ করবে না বলে জানিয়েছিল টালিগঞ্জের ৯৮ নম্বর ওয়ার্ডের নেতাজিনগর বাস্তুহারা সমিতির দুর্গোৎসব কমিটি। মুদিয়ালির ‘আমরা ক’জন’ ক্লাবের তরফেও ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে সরকারি অনুদানের ৮৫ হাজার টাকা। মুদিয়ালির পুজোর প্রধান উদ্যোক্তা মহম্মদ মোখতার বলেন, ‘‘আমরা সরকারের সাহায্য নেব না বলে জানিয়ে দিয়েছি। আমাদের পুজোর মূল ভাবনাও বদলে দিয়েছি। আমাদের পুজোয় এ বার কোনও উদ্যাপন, অনুষ্ঠান হবে না। এ বারের পুজোর থিমও ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’।”
সরকারি অনুদান ফেরানোর ‘ট্রেন্ডে’র মধ্যে অন্য ছবিও দেখা গেছে শহরে। পুজোয় ৮৫ হাজার টাকা সরকারি অনুদান পেতে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে তিন ক্লাব; বাদল পল্লি মহিলা দুর্গোৎসব কমিটি, বাঁশদ্রোণী কালীতলা পার্ক নাগরিক সেবা সমিটি এবং নিবেদিতা পার্ক অ্যাসোসিয়েশন।
তবে গতকাল এই অনুদান নেওয়া না নেওয়া নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর স্পষ্ট বার্তা, কোনো কমিটি যদি অনুদান না নেয় তাহলে তাদের নিজেদের পুজো করার ক্ষমতা আছে। তাদের স্বাগত জানিয়েছেন তিনি। তাদের বদলে যেসব পুজো কমিটি প্রথমবার অনুদানের আবেদন করেছে তাদের অনুদান দেওয়া হবে।