বাংলা বিভাগে ফিরে যান

Exclusive: পঞ্চায়েত নির্বাচনে খুশির হাওয়া পাহাড়ে

জুন 15, 2023 | 2 min read

Voters waiting in line in Cooch Behar
Image – PTI

বর্তমানের দার্জিলিং পার্বত্য অঞ্চল এবং কালিম্পঙ জেলায় শেষ পঞ্চায়েত নির্বাচন হয়েছিল ২০০০ সালে। দু’দশক ধরে দাবি ছিল, পঞ্চায়েত নির্বাচন করাতে হবে। অবশেষে তা ঘোষণা হওয়ায় খুশির হাওয়া বইছে “টুং-সোনাদা-ঘুম পেরিয়ে”। রঙ্গীত, লেবঙ, বাদামটাম, ঝেপির মানুষ বুক বাঁধছেন আশায়।

পাহাড়ের বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনকে প্রশমিত করতে বাম আমলে ‘দার্জিলিং গোর্খা হিলস কর্পোরেশন’ বা ‘ডিজিএইচসি’ তৈরি করা হয়, কিন্তু কোনোদিন তাদের থেকে কোনো কাজের হিসেব চাওয়া হয়নি রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে। পাহাড়ের দল জিএনএলএফ সেখানে বেশিরভাগ সময়কাল জুড়ে ক্ষমতায় থাকলেও হিসেব না চাওয়া বা দেওয়ার জেরে প্রত্যেক মুহূর্তে অনুন্নয়নের কোলে ঢোলে পড়তে হয় পাহাড়কে। বলাই বাহুল্য, সব পক্ষই মানবোন্নয়নের আগে রাজনীতির ঘুঁটি সাজানোকে প্রাধান্য দিয়েছিলো। হিসেব না চাওয়ায় উন্নয়নের দিকে প্রায় কোনো মনই দেননি সুভাষ ঘিসিংরা, এবং ফুলেফেঁপে উঠেছেন জনগণের টাকা আত্মস্যাৎ করে। রাজ্যের বামপন্থী সরকারও উন্নয়ন বা সেই খাতে পাঠানো টাকার কোনো অডিট না করে ভালো সম্পর্ক বজায় রেখেছিলো গোর্খা ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্টের সঙ্গে, সিপিআইএম বাড়িয়েছিল পাহাড়ে নিজেদের ইউনিয়নের সংখ্যা এবং রাজ্যের তৎকালীন কর্তারা হিসেব কষেছিলেন ঘিসিংদের মাথা অবধি দুর্নীতিতে ডুবিয়ে আবার অন্য কাউকে বসানো হবে তাঁর আসনে।

হলও তাই। জিএনএলএফের জনপ্রিয়তা কমতে শুরু করলো, সুভাষ ঘিসিং হারালেন, এবং তাঁর জায়গায় উঠে এলেন তৎকালীন যুব নেতা বিমল গুরুং। তৈরি করলেন নিজের দল – গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। ২০১১ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় আসার পর ডিজিএইচসির অবসান ঘটিয়ে তৈরি করেন ‘গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ বা জিটিএ। প্রথমে মমতা-গুরুং সম্পর্ক মধুর থাকলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই কাজটা করলেন যা এত বছরে বামেরা করেনি – অডিট করার ঘোষণা করেন। শুরু হয়ে যায় অশান্তি, বারংবার, বছরের পর বছর ধরে। কিন্তু ২০১৬-র পর থেকে মোটামুটি শান্ত পাহাড়।

এবার, এত বছর পর যেন মরা গাঙে বান আসার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে পাহাড়ে। এখন এক নয়, বহু দলের দাপট পাহাড় জুড়ে, যা গণতান্ত্রিক মাটিকে আরও শক্ত করে তুলবে। ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত নির্বাচনের দাবি থাকলেও হবে দ্বিস্তরীয় – মানুষ ভোট দেবেন গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির জন্য। যেহেতু এখনও পাহাড়ের মূল নিয়ামক প্রতিষ্ঠান জিটিএ, তাই জেলা পরিষদ আসনে ভোট হবে না।

শান্তি কিছুটা হলেও ফিরলেও অনুন্নয়নের অভিযোগ এখনও পাহাড়ের গোর্খা, লেপচা, ভুটিয়া, টোটো মানুষের মুখে-মুখে। এখনও বিস্তীর্ণ অঞ্চলে নেই ভালো রাস্তা, জলের ব্যবস্থা, নেই শৌচাগার, নালা-নর্দমা, স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে পথের আলো। ভোট-উৎসবকে স্বাগত জানাচ্ছেন সকলেই।

ইতিমধ্যেই ২ বনাম ৮ ফর্মুলা তৈরি করে ফেলেছে বিজেপি। বলা যায়, এটি পাহাড়ের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক একেবারে নতুন অধ্যায়। বর্তমানে পাহাড়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় দল অনিত থাপার নেতৃত্বাধীন ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চা বা বিজিপিএম। শাসকদল তৃণমূলের সঙ্গে জোটে তারা। পাহাড়ের প্রশাসন থেকে দার্জিলিং পুরসভা – সবই তাদের দখলে। এই জোটের বিরুদ্ধে ৮টি দলকে একত্রিত করেছে বিজেপি। আবারো জোট করেছে বিমল গুরুঙ্গের জনমুক্তি মোর্চা ও জিএনএলএফের সঙ্গে। অন্য দলগুলি হলো হামরো পার্টি, সিপিআরএম, অখিল ভারত গোর্খা লিগ, সুমেটি মুক্তি মোর্চা, গোর্খাল্যান্ড রাজ্য নির্মাণ মোর্চা। আরও ছোট দলেদের এই জোটে শামিল করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন দার্জিলিঙের বিজেপি সাংসদ রাজু বিস্ত। শাসক এবং বিরোধী – দুই পক্ষের কাছেই এখন পাহাড় জয় প্রেস্টিজ ফাইট হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এখন দেখার, গণতন্ত্রের উৎসবে মানুষ জিতবে না পুরোনো ছবি ফিরে এসে দেখা যাবে “পাহাড়চূড়ায় আতঙ্ক”।

FacebookWhatsAppEmailShare

আরো দেখুন

৪১,৮৮৯টি পুজো কমিটির মধ্যে অনুদান ফিরিয়েছে মাত্র ৫৯টি
FacebookWhatsAppEmailShare
নিশিকান্তের স্থায়ী কমিটি থেকে মহুয়াকে সরাতে চিঠি তৃণমূলের
FacebookWhatsAppEmailShare
পুজোর আগেই রাজ্যে নিয়োগ করা হবে ১৪,০৫২ জন শিক্ষককে
FacebookWhatsAppEmailShare