দেশ বিভাগে ফিরে যান

রেলযাত্রা আদৌ কতটা নিরাপদ

জুন 3, 2023 | 2 min read

শুক্রবার (৩ জুন, ২০২৩) সন্ধ্যা নাগাদ চেন্নাইগামী করমণ্ডল এক্সপ্রেস ওড়িশার বালেশ্বরের কাছে দুর্ঘটনার মুখে পড়ে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এখন মৃতের সংখ্যা ২৩৩, ৯০০’র বেশি আহত। আজ সকালে দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব।

কেউ যাচ্ছিলেন চিকিৎসা করাতে। কারো আবার অনেক দিন না দেখা আত্মীয়ের সঙ্গে দেখা হওয়ার কথা ছিল। এক লহমায় ওলটপালট হয়ে গেলো সবকিছু। চারদিকে ছড়িয়ে রয়েছে দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া রেললাইনের টুকরো, সারি সারি মৃতদেহ পড়ে রয়েছে চাদর চাপা অবস্থায়। ধ্বংস স্তুপে শুধু আর্তনাদের প্রতিধ্বনি। কিন্তু কেন হল এমন দুর্ঘটনা? সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কোথায়?

২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে রাজ্যসভায় রেলের নিরাপত্তা সংক্রান্ত প্রশ্নের লিখিত জবাবে রেলমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য দক্ষিণ-পূর্ব রেলের ১,৪৪৫টি রুটে ইতিমধ্যে পর্যায়ক্রমে ‘কবচ’ কার্যকর হয়েছে। এখন দিল্লি-মুম্বই এবং দিল্লি-হাওড়া করিডরে (৩,০০০ কিলোমিটার) কাজ চলছে। পর্যায়ক্রমে চলার কারণ, এমন অত্যাধুনিক ব্যবস্থা কার্যকর করার মতো সব রেলপথ যুতসই নয়। তাই আগে রেলপথের আধুনিকীকরণ করতে হচ্ছে। এই কাজ সম্পূর্ণ হলে সংঘর্ষরোধী এই অত্যাধুনিক ‘সিস্টেম’ কার্যকর করা যাবে। তবে, সেই কাজ এখন কতটা এগিয়েছে, তা অজানা।

কী এই ‘কবচ’ আর কীভাবে কাজ করে?

অত্যাধুনিক ইলেকট্রনিক সিস্টেমে নকশা-করা একটি স্বয়ংক্রিয় ট্রেন সুরক্ষা পদ্ধতি, যার পোশাকি নাম ‘কবচ’। ‘অটোমেটেড ট্রেন প্রোটেকশন সিস্টেম’। ট্রেনের ব্রেকিং সিস্টেম কাজ না-করলে বা চালক জরুরি পরিস্থিতিতে ট্রেন থামাতে ব্যর্থ হলেও সংশ্লিষ্ট ট্রেনটি নিজে থেকেই থেমে যাবে এর মাধ্যমে। এর ফলে যে কোনও ধরনের বিপদ থেকে রক্ষা পাবে ট্রেনটি। এই ‘আপডেট মেশিন ইন্টারফেস’ এর মাধ্যমে লোকো পাইলট সতর্ক থাকতে পারবেন। এছাড়া কোনও ট্রেন অতিরিক্ত গতিতে দৌড়োলেও স্বয়ংক্রিয় ব্রেকের মাধ্যমে ট্রেনের গতি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে, দু’টি ইঞ্জিনের মধ্যে সংঘর্ষ রোখা যাবে, নেটওয়ার্ক পদ্ধতিতে ট্রেন চলাচলের গতিবিধির উপর সরাসরি নজর রাখা যাবে।

প্রশ্ন উঠছে, এতো ফলাও করে দেওয়া বিবৃতি, টুইট এসবের পরও এতো বড় দুর্ঘটনা হল কি করে?

করমণ্ডলে কি ‘কবচ’ পদ্ধতি ছিল? যদি না-থাকে তাহলে কেন তা এমন একটি জনপ্রিয় এবং গুরুত্বপূর্ণ ট্রেনে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়নি? তবে ব্যবহার করা হলেও তা দুর্ঘটনা আটকাতে পারত কিনা তাই নিয়ে রয়েছে সন্দেহ।

রেলমন্ত্রীর দাবি অনুযায়ী, এই প্রযুক্তি প্রয়োগ করলে ১০ হাজার বছরে মাত্র এক বার দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে! কিন্তু কবচ শুধু দু’টি ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ রোধ করে, না একই লাইনে একটি ট্রেনের পিছনে অন্য একটি ট্রেন গিয়ে ধাক্কা মারলে তা-ও রুখতে পারে, তা নিয়ে যথেষ্ট বিভ্রান্তি রয়েছে। আবার এও বলা হয়েছে সংশ্লিষ্ট দু’টি ট্রেনেই ওই পদ্ধতি থাকলে তবেই ‘কবচ’ পদ্ধতি কাজ করবে। একটি ট্রেনে থাকলে সংঘর্ষ রোখার ক্ষমতা নেই এই প্রযুক্তির । যাত্রীবাহী ট্রেন ছাড়া মালবাহী ট্রেনে ‘কবচ’ পদ্ধতি ব্যবহার করার কোনও পরিকল্পনা রেলের নেই।

তবে প্রাথমিক অনুমান, শুক্রবার সন্ধ্যায় করমণ্ডল এক্সপ্রেস লাইনে দাঁড়িয়ে-থাকা মালগাড়ির পিছনে ধাক্কা মেরে লাইনচ্যুত হয়েছে, তাই এক্ষেত্রে ‘কবচ’ প্রযুক্তি কাজ করার কথাও নয়। তবে সবশেষে যাত্রী নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েই যাচ্ছে।

FacebookWhatsAppEmailShare

আরো দেখুন

অযোধ্যা মামলার সময় ঈশ্বরের দ্বারস্থ হন খোদ প্রধান বিচারপতি
FacebookWhatsAppEmailShare
মাদ্রাসাগুলিকে অর্থ সাহায্য বন্ধ করা চলবে না, এনসিপিসিআরের সুপারিশে সুপ্রিম স্থগিতাদেশ
FacebookWhatsAppEmailShare
ওষুধের ৫০% পর্যন্ত দাম বৃদ্ধি নিয়ে মমতা চিঠি দিলেন প্রধানমন্ত্রীকে
FacebookWhatsAppEmailShare