খবর বিভাগে ফিরে যান

ক্রিস ‘স্মলস’-রা ‘বড়’ করে চলেছেন আমেরিকার শ্রমিক ঐক্য

সেপ্টেম্বর 10, 2022 | 2 min read

স্বপ্ন ও সম্ভাবনার মাটি আমেরিকা। বলা হয়, সেখানে একটু পরিশ্রম করলেই হাতের মুঠোয়ে পাওয়া যায় সেই বহু বিখ্যাত ‘আমেরিকান ড্রিম’। বলা হবেনাই বা কেন, ম্যাকডোনাল্ডস থেকে অ্যামাজন, টেসলা থেকে ওয়ালমার্ট – সবেরই জন্ম ‘স্টার স্প্র্যাংল্ড ব্যানার’-এর ভূমিতে।

কিন্তু এই সাফল্য, এত বড়-বড় কোম্পানি, শিল্পপতিদের ‘সেন্টিবিলিয়নেয়ার’ হয়ে ওঠার পেছনে আছেন কারা? শ্রমিকরা। এই জন্যই হয়তো বলা হয়, আপনি কার্ল মার্ক্সকে পছন্দ করতে পারেন, বা অপছন্দ, কিন্তু তাঁর বলে যাওয়া কথা ফেলতে পারবেননা।

আমেরিকার গত রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী বার্নি স্যান্ডার্স আওয়াজ তুলেছিলেন শ্রমিকদের পর্যাপ্ত মজুরি, বা ‘লিভিং ওয়েজ’ দেওয়ার পক্ষে। ঘন্টায় ১৮ ডলার মজুরি না পেলে ‘স্বপ্নের দেশ’-এর কর্মীরা একটি এক কামরার ঘর ভাড়া করেও থাকতে পারেননা। কিন্তু এতদিন তাতে কোনো কর্ণপাতই করেননি জেফ বেজোস বা ওয়ালবার্গ পরিবারেরা। কারণ, আমেরিকায় ছিলোনা কোনো শ্রমিক ইউনিয়ন, এবং কেউ তা গঠন করতে গেলেই দাগিয়ে দেওয়া হতো ‘কমি’ বলে।

এখানেই ব্যতিক্রম হয়ে দাঁড়িয়েছেন ক্রিস স্মলস।

একদা র‍্যাপার হওয়ার স্বপ্ন দেখা স্মলস নিউ ইয়র্কে অ্যামাজনের স্ট্যাটেন আইল্যান্ড ওয়‍্যারহাউস JFK8-এ যোগদান করেন একজন কর্মী হিসেবে, নিজের পরিবারের মুখে খাবার তুলে দিতে। ২০২০-র ৩০শে মার্চ স্মলস একটি ওয়াকআউট আয়োজন করেন ওয়‍্যারহাউসের সাবধানতা বিধির অভাব ও অনাবৃত কোভিড সংক্রমণের প্রতিবাদে। সেই দিনই তার চাকরি খেয়ে নেয় অ্যামাজন।

চাকরি চলে যাওয়ার পরেই ক্রিস স্মলস অন্য শ্রমিকদের নিয়ে গঠন করেন ‘দ্য কংগ্রেস অফ এসেনশিয়াল ওয়ার্কার্স’ এবং ২০শে এপ্রিল ২০২১-এ গঠিত হয় ‘অ্যামাজন লেবার ইউনিয়ন’ (ALU)।

যে ক্রিস স্মলসের ফোন এক বছর আগে তুলতেন না নেতা-রাজনীতিকরা, তারই কাছে এখন দৌড়ে পৌঁছে যান বার্নি স্যান্ডার্স, অ্যালেক্সান্ড্রিয়া ওকাশিও-কর্টেজের মতো বিরাট মাপের কংগ্রেস সদস্যরা।

৩৩ বছর বয়সী, ৩ সন্তানের পিতা ক্রিসের নেতৃত্বেই এখন আমেরিকা জুড়ে চলছে শ্রমিক ইউনিয়নের ঝড়। ১০০টির ওপর অ্যামাজন ওয়‍্যারহাউসের কর্মীরা যোগাযোগ করছে ALU-এর সঙ্গে তাদের জায়গায় আন্দোলন সংগঠিত করার দিকনির্দেশ চাইতে।

অ্যামাজন কতৃপক্ষও চালিয়ে যাচ্ছে তাদের ইউনিয়ন-বিরোধী প্রচার। কিন্তু রোখা যাচ্ছেনা ALU-কে। শুধু এই এক ক্রিস স্মলসের সাহসের ওপর ভর করে স্টারবাক্স, অ্যাপেল, ডলার জেনারেলের মতো সংস্থার কর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে, আওয়াজ তুলছে বর্ধিত মজুরি ও উন্নততর কাজ করার পরিবেশের দাবিতে।

কিন্তু টাকা হয়ে উঠছে তাদের সবথেকে বড় শত্রু। গত বছর শুধু ইউনিয়ন-বিরোধী কনসালটেন্সি পেতে অ্যামাজন খরচ করেছে ৪.৩ মিলিয়ন ডলার!

কিন্তু অতিমারীর সময় থেকে আমেরিকায় ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে লেবার ইউনিয়নের প্রতি সমর্থন। একটি নতুন গ্যালাপ পোলে জানা যাচ্ছে যে ৫৭ বছরে সর্বোচ্চ ৭১% মানুষের সমর্থন পাচ্ছে ALU-এর মত সংগঠনগুলি। যা ১৯৬৫ সালের পর সর্বোচ্চ।

এই আগুন আটকে নেই শুধু শ্রমিকদের মধ্যে। স্বাস্থ্যকর্মী, সরকারের সামাজিক উন্নয়ন বিভাগের কর্মী, সাদা-কলারের চাকরি করা মানুষজন, এমনকি প্রশাসনিক কাজ করা ক্লার্করাও সংগঠিত হচ্ছেন নিজ-নিজ ব্যানারের তলায়।

ইউনিয়নের চেহারা এতটাই বেড়ে চলেছে যে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ভাইস-প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের ডাক পেয়েছেন ক্রিস স্মলস। আমেরিকার মানুষের মধ্যে বাড়ছে শ্রমিকদের প্রতি সহানুভূতি।

সে বড় কোম্পানিরা পলিসি নিতেই পারে যে ইউনিয়ন-হওয়া আউটলেটের কোনো উন্নয়ন তারা করবেনা, বা কর্মীদের আয় বৃদ্ধি করবেনা….কিন্তু কত দিন?

কার্ল মার্ক্স বলেছিলেন “Workers of the world unite….You have nothing to lose but your chains”, এবং রিপাব্লিকানদের মুখের ওপর ক্রিস স্মলস বলে এসেছেন, “শ্রমিকদের অধিকার কোনো রিপাব্লিকান বা ডেমোক্র্যাট বিষয় নয়, এটা মানবাধিকারের বিষয়”।

আরো ‘বড়’ হয়ে উঠুক ক্রিস ‘স্মলস’-রা, ওয়াল স্ট্রিট বা ‘সেন্টিবিলিওনেয়ার’ না, শ্রমিক, খেটে খাওয়া মানুষদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হোক ক্যাপিটাল-ভূম আমেরিকায়।

FacebookWhatsAppEmailShare

আরো দেখুন

দেরাদুন গণধর্ষণের খবর প্রকাশ্যে আনায় বিজেপি সরকারের হুঁশিয়ারি সংবাদমাধ্যমকে
FacebookWhatsAppEmailShare
‘এক রাতে নোটবন্দি-লকডাউন হলে, ধর্ষকদের ফাঁসি নয় কেন?’ প্রশ্ন দেব-শুভশ্রীর
FacebookWhatsAppEmailShare
জম্মু ও কাশ্মীর বিধানসভা নির্বাচনের আগে অসন্তোষ বিজেপি শিবিরে? প্রার্থীতালিকা প্রত্যাহার
FacebookWhatsAppEmailShare