“ভারতীয় সমাজ সবসময় বৈচিত্রময়”: ঝুম্পা লাহিড়ী
যেহেতু আমি ভারতের বাইরে জন্মেছি ও বড় হয়েছি, ভারত আমার কাছে আরও বেশি তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে ওঠে। আমি বড় হয়েছি আমার মা-বাবার সঙ্গে যাঁরা ভারতের কথা মনে করার দরুণ অন্য ভারতীয়দের খোঁজ ও তাদের সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি করতেন, তাই ভারতীয় সমাজ সম্পর্কে আমার ধারণা যে তা সবসময় বৈচিত্রময়।
যখন তাঁরা অন্য ভারতীয় পরিবারদের আমাদের বাড়ি নিমন্ত্রণ করতেন, রোড আইল্যান্ডের সেই ছোট শহরে যেখানে আমার বেড়ে ওঠা, আমি বুঝলাম যে ভারত একটি নমনীয় পাত্রের মতো, যেখানে থাকেন মানুষ যাঁরা কথা বলেন, খান, জামাকাপড় পরেন ও প্রার্থনা করেন বিভিন্নভাবে। এগুলো আলাদাভাবে বৈচিত্রময় ভারতকে আরো সমৃদ্ধ করতো না; এটাই ভারত।
এই সূত্রে বলাই যায় যে আমেরিকার মাটিতে ভারত কয়েক আলোকবর্ষ এগিয়ে ছিলো, যে আমেরিকা নামে ছিলো সর্ব জাতির সংমিশ্রণের স্থল কিন্তু কাজে ছিলো বিচ্ছিন্নকারী ও সঙ্কীর্ণতাপূর্ণ, অন্তত আমার মতে।
কলকাতায় আসা, যে শহরটির সম্মন্ধে আমার মা বলতেন যে ভারতের সব প্রান্তের মানুষকে আপন করে নেয়, আমার ধারণাকে নিশ্চিৎ করে দেয় ভারতের কাঠামোর মধ্যেই ছিলো ‘অন্য’-কে আপন করে নেওয়ার গুণ।
ভারতের বহুভাষিক দিকটি, বিশেষতভাবে, আমাকে একইসঙ্গে অনুপ্রেরণা ও সান্তনা দেয়, কারণ তা যোগাযোগ ও অনুবাদের ক্রমাগত প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেয়। একাধিক ভাষার উপস্থিতি কৌতুহল তৈরি করে, ব্যাখ্যার দরকার ঘটায় ও নিরঙ্কুশ ক্ষমতার যেকোনো ধারণাকে দমন করে।
কিছু বুনন কেটে যাওয়া, কিছু সুতোর ছিঁড়ে যাওয়া, আর এই সম্পূর্ণ আলোচনা হারিয়ে যায়; আমরা পড়ে থাকি একটা ছেঁড়া-ফাটা সমাজ নিয়ে, যেখানে থাকে চাপিয়ে দেওয়া নিস্তব্ধতা এবং অতি সাধারণ ও খারাপ জাতীয়তার ধারণা।
(ইংরেজিতে এই লেখাটি প্রথম প্রকাশ পায় ১৫ আগস্ট, ২০২২-এ pen.org আয়োজিত India at 75-এর অন্তর্গত অন্যতম রচনা হিসেবে। পাঠকদের সুবিধার্থে লেখাটি ইংরেজি থেকে অনুবাদ করা হয়েছে)