চলে গেলেন ফেলুদা, শূন্য অপুর সংসার
নভেম্বর 15, 2020 2 min read
৪০ দিনের লড়াই শেষে চলে গেলেন ফেলুদা, শূন্য অপুর সংসার
হাসপাতালে দীর্ঘ লড়াইয়ের পর রবিবার দুপুর সওয়া ১২টায় মধ্য কলকাতার বেলভিউ নার্সিংহোমে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় – যাঁর নাম শুনলেই বাঙালির হৃদয় উদ্বেলিত হয়…শ্রদ্ধায় মাথা নত হয় আট থেকে আশির…
তাঁর চলচ্চিত্রাভিনয়, মঞ্চাভিনয়, কবিতা, গদ্যরচনা বা আবৃত্তিই কোনটিই জীবনবিমুখ নয়। অভিনয় তাঁর একটি সত্তা মাত্র। কবিতাচর্চা, রবীন্দ্রপাঠ, সম্পাদনা, নাট্যসংগঠন তাঁর বিপুল বৈচিত্রের এক একটি দিক।
অভিনেতার রুপোলি সফর শুরু হয়, ১৯৫৯ সালে। ছবির নাম অপুর সংসার, যা পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন বিশ্ববরেণ্য চলচ্চিত্র পরিচালক সত্যজিত্ রায়। সেই পথচলা শুরু এই জুটির। সত্যজিত পরিচালিত ৩৪টি ছবির ১৪টি ছবিতে অভিনয় করেছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, যা বিরল প্রাপ্তি।
প্রথম ছবিতেই বাজিমাত। তারপরের অধ্যায়টা ইতিহাস। এসেই যেন লাইমলাইট কেড়ে নিয়েছিলেন এই দীর্ঘাকৃতি, সুদর্শন পুরুষ।
এর পর একে একে ‘ক্ষুধিত পাষাণ’, ‘দেবী’, ‘ঝিন্দের বন্দি’, ‘চারুলতা’, ‘কিনু গোয়ালার গলি’… তালিকাটা গুনে শেষ করা যাবে না। সত্যজিত রায়ের প্রায় ১৪টি সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন তিনি। সত্যজিতের সৃষ্টি ফেলুদাকে বড় পর্দায় জীবন্ত করেছিলেন তিনিই। এছাড়াও ‘অসমাপ্ত’, ‘কাপুরুষ ও মহাপুরুষ’, ‘গণদেবতা’, ‘কোনি’, ‘আগন্তুক’.. তার অভিনীত সফল সিনেমার তালিকা বলে শেষ করা যাবে না।
২০০৬ সালে পদ্মভূষণ সম্মান, তারপর ২০১১ সালে দাদা সাহেব ফালকে পুরস্কার পেয়েছিলেন। ফ্রান্সের সর্বোচ্চ জাতীয় সম্মান পেয়েছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। ২০১৮ সালে লিজিয় দ্য নর সম্মান পেয়েছিলেন।
সম্প্রতি তার অভিনীত কয়েকটি বিখ্যাত সিনেমা – ‘পোস্ত’, ‘বসু পরিবার’, ‘ময়ূরাক্ষী’, ‘বেলাশেষে’ বাঙালির মন কেড়েছে।
২০১৫ সাল তার অভিনীত ‘বেলাশেষে’ যে শুধুমাত্র সমালোচকদের তারিফ পেয়েছিল তা-ই নয়, বক্সঅফিসেও সাফল্য পেয়েছিল। খোদ অমিতাভ বচ্চন সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রশংসা করেছিলেন ছবিটির। ২০২০ তে শুরু হয়েছিল ‘বেলাশুরু’-র শুটিং। এবছরই পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় নিজের পরিচালনায়, তার বায়োপিক ‘অভিযান’-এর শুটিং শুরু করেছিলেন ।
আজ অপুর সংসারের সেই ডায়লগ টা ভীষণ মনে পড়ছে – ‘‘…বুদ্ধি দিয়ে ছাড়া সে কোনও কিছু মানতে চাইছে না, ছোট ছোট জিনিস তাকে আনন্দ দিচ্ছে, তাকে ‘মুভ’ করছে… সে জীবনবিমুখ হচ্ছে না, সে পালাচ্ছে না, ‘এসকেপ’ করছে না, সে বাঁচতে চাইছে, সে বলছে বাঁচার মধ্যেই সার্থকতা, তার মধ্যেই আনন্দ।’’